আল্লাহর পথে দাওয়াত নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীদের জন্য যরূরী। আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এ মহান দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাঁর অনুসারীদের পালন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘হে রাসূল! আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তা পৌঁছে দিন। আপনি যদি এরূপ না করেন তবে আপনি তাঁর রিসালাত পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অস্বীকারকারী সম্প্রদায়কে সঠিক পথ দেখান না’ (মায়েদা ৬৭)।
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে তাঁর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ বিধি-বিধান তথা ‘অহি’ মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে বলেছেন এবং তা না পৌঁছালে তাঁর পক্ষ থেকে অর্পিত দায়িত্ব পালন করলেন না বলে সতর্ক করে দিয়েছেন। সেই সাথে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছাতে গিয়ে মানুষের পক্ষ থেকে কোন বিপদাপদ আসলে তিনি রক্ষা করবেন বলে প্রতিশ্রুতিও দান করেছেন। শুধু তাই নয় সর্বশ্রেণীর মানুষ যে সঠিক পথ গ্রহণ করবে না সে কথাও অত্র আয়াতে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ প্রেরিত বিধান মানুষের নিকট পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব শুধু নবী-রাসূলগণের জন্য খাছ নয়; বরং সর্বযুগের সকল আলেমে দ্বীনের জন্য এ দায়িত্ব পালন করা আবশ্যক। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,
‘আপনি আপনার পালনকর্তার দিকে (মানুষকে) দাওয়াত দিন। আর আপনি অবশ্যই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না’ (ক্বাছাছ ৮৭)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ পাক নবীকে বলেন, আপনি তাওহীদের দাওয়াত দিন। অন্যথায় আপনি মুশরিকদের সহযোগী হবেন। কারণ তারা আল্লাহর একত্ববাদের দাওয়াত দেয় না। অতএব যারা দ্বীন অবগত হওয়ার পর অন্যদের দাওয়াত দিবে না, তারা মুশরিকদের সহযোগী হবে এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন
আপনি আপনার পালনকর্তার প্রতি দাওয়াত দিন কুরআন বা সঠিক জ্ঞান এবং উত্তম উপদেশের মাধ্যমে। আর পসন্দনীয় পন্থায় প্রত্যুত্তর করুন’ (নাহল ১২৫)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে পবিত্র কুরআন ও উপকারী সুন্দর কথার মাধ্যমে আল্লাহর পথে দাওয়াত দেওয়ার জন্য নির্দেশ করেছেন। সেক্ষেত্রে কোন লোক বিতর্কে লিপ্ত হ’লে তার প্রত্যুত্তর সুন্দর ও উত্তম পন্থায় দিতে বলেছেন। কাজেই আমাদেরকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মাধ্যমে মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে। আর এ দাওয়াত দিতে গিয়ে কোন মানুষ বিতর্কে লিপ্ত হ’লে তার প্রত্যুত্তর ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে উত্তম পন্থায় প্রদান করতে হবে। অত্র আয়াত দ্বারা আরো প্রমাণিত হয় যে, দাওযাতের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন ও গ্রহণযোগ্য হাদীছ হ’তে হবে।
আল্লাহ বলেন,
‘হে নবী! আপনি বলুন, এটিই আমার পথ। আমি এবং আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর পথে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে (সুস্পষ্ট দলীল সহকারে)। আল্লাহ মহা পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১০৮)।
এখানে আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রিয় নবীকে সঠিক পথে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সুস্পষ্ট দলীল সহকারে। সেই সাথে তাঁর অনুসারীদেরকেও দলীল সহকারে দাওয়াত দেওয়ার নির্দেশ করেছেন। আয়াতের শেষাংশে তাওহীদের দাওয়াত দানকারী মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত যেন না হয় বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অতএব আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আমাদেরকে সুস্পষ্ট দলীল সহকারে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে হবে।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,
‘হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি এবং আল্লাহর আদেশক্রমে তাঁর পথে দাওয়াত দানকারী হিসাবে ও উজ্জ্বল প্রদীপ রূপে’ (আহযাব ৪৪-৪৫)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা প্রিয় নবী (ছা্ঃ)-কে ‘আল্লাহর পথে দাওয়াত দানকারী’ বলে ঘোষণা করেছেন এবং ‘উজ্জ্বল প্রদীপ’ বলে উল্লেখ করেছেন। অতএব দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেন
‘তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা সৎকর্মের প্রতি দাওয়াত দিবে এবং অসৎকর্ম থেকে নিষেধ করবে, আর তারাই হবে সফলকাম’ (আলে ইমরান ১০৪)।
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা কিছু লোককে সৎকর্মের আদেশ এবং অসৎকর্মের নিষেধ করার জন্য বের হ’তে বলেছেন। তাই আলেম সমাজকেই এ মহান দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহ বলেন,
আর মুমিন পুরুষ ও নারীরা হচ্ছে পরস্পর একে অন্যের বন্ধু, তারা সৎ কাজের আদেশ দেয় এবং অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করে, আর ছালাত কায়েম করে ও যাকাত প্রদান করে, আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আদেশ মেনে চলে, এসব লোকের প্রতি আল্লাহ অবশ্যই করুণা বর্ষণ করবেন, নিঃসন্দেহে আল্লাহ অতিশয় সম্মানিত ও মহাজ্ঞানী (তওবা ৭১)।
সংগৃহীত